কম্পিউটারকে সুপার ফার্স্ট করার ও স্পিড বাড়ানোর উপায়

কম্পিউটারকে সুপার ফার্স্ট করার ও স্পিড বাড়ানোর উপায়

আমরা সবাই চাই, আমাদের নিজেদের ব্যাবহার করা ল্যাপটপ বা কম্পিউটারটি যেন সব সময় ফার্স্ট থাকে। কারণ কম্পিউটার যদি স্লো থাকে তাহলে কোনো কাজই শান্তিতে করা যায় না। আর কাজের মাঝে যদি কম্পিউটার যদি হ্যাং করে তো তাহলে কেমন লাগে , এটা শুধু সেই মানুষটি বুঝবে যে এমন পরিস্থিতিতে পরেছিল।কম্পিউটার হোক বা ল্যাপটপ-ই হোক না কেন, আমাদের উচিত ডিভাইসটিকে ফার্স্ট রাখা। এখন আবার আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে যে কম্পিউটার হলো ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস , এটাকে আমরা আবার কেমন করে ফার্স্ট করবো। সত্য বলতে কি জানেন , আপনার কম্পিউটার স্লো হবার পেছনে বা স্পিড কমে যাবার পেছনে আপনারই হাত থাকে । আর ফার্স্ট থাকার পেছনে বা স্পিড ভালো থাকার পেছনেও আপনারই হাত।

এখন আবার প্রশ্ন জাগতে পারে কেমন করে স্লো আর ফার্স্ট হবার পেছনে আমার হাত? আপনার চিন্তার কোনো কারণ নেই । আজকে আমি সব কিছুই আপনাদের জানাবো। আজকের এই পোস্টটি অনেক লম্বা হতে চলেছে কারণ এখানে A to Z পর্যন্ত আলোচনা করা হয়েছে। যদি আপনার কম্পিউটার স্লো হয়ে থাকবে তাহলে আপনার এই পোস্টটি অবশ্যই দেখা উচিত । তাই ধর্য্য নিয়ে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়তে থাকুন। অনেক কিছুই জানতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।

এই পোস্টের মাধ্যমে আপনি যা যা জানতে পারবেন-

  • কেন কম্পিউটার স্লো হয়ে যায়?
  • কেন কম্পিউটার হ্যাং করে?
  • কম্পিউটার হ্যাং করলে করনীয়
  • কীভাবে স্লো কম্পিউটারকে নতুন এর মতো ফার্স্ট করবেন বা স্পিড বাড়াবেন।

প্রথমে আলোচনা করি

কম্পিউটার স্লো হবার কারণ বা কেন আমাদের কম্পিউটার স্লো হয়ে যায় ?

আমরা যখন  একটি নতুন কম্পিউটার কিনে চালাই তখন কম্পিউটারটি অনেক ফার্স্ট চলে। কিন্তু  কয়েক মাস পর থেকে সময়ের সাথে সাথে কম্পিউটারটি স্লো হতে থাকে। কিছু কম্পিউটার তো এতোটাই স্লো হয় যে ভেঙ্গে ফেলতে ইচ্ছা করে ।

আসলে শুধু শুধু কম্পিউটার স্লো হয় না। আমাদের কিছু ভুলের জন্যই স্লো হয়। আমরা যখন মাসের পর  মাস কম্পিউটার ব্যবহার করি । তখন আমাদের অজান্তেই আমাদের কম্পিউটারের ভিতরে অনেক টেমপোরারি ফাইল জমা হয়। এই ফাইল গুলো যত বেশি জমা হতে থাকে । কম্পিউটার তত বেশি স্লো হতে থাকে ।আবার আমরা অনেকে আছি যারা সি ড্রাইভে পর্যাপ্ত জায়গা ফাকা রাখি না। কম্পিউটার স্লো হবার এটাও একটিন কারণ।

আবার আমরা অনেকে আছি যারা ক্রাক সফটওয়্যার ব্যবহার করি। এই ক্রাক সফটওয়্যার ব্যবহার করা খুবেই ঝুকিপূর্ণ । এই সফটওয়্যারগুলো একদিকে যেমন কম্পিউটারের ডেটা বা তথ্য চুরি করে নেয়। তেমন অন্য দিকে কম্পিউটারকে স্লো করে দেয় আবার র‍্যাম আর প্রোসেসোর সহ অন্যান্য হার্ডওয়্যারের ক্ষতি তো করেই।

আবার অনেকে আছি যারা কম্পিউটারে ২জিবি র‍্যাম লাগিয়ে অনেক বড় বড় সফটওয়্যার রান করার চেষ্টা করি। এই জন্যেও কিন্তু কম্পিউটার স্লো হয়ে যায়। আর সব থেকে আমরা যে ভূল করি তা হলো কম্পিউটার পরিষ্কার করি না। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মাদার বোর্ড , র‍্যম সহ অন্যান্য হার্ডওয়্যারে অনেক ধুলাবালি জমা হয়। ফলে হার্ডওয়্যার গুলো ঠিক ভাবে কাজ করতে পারে না ফলে কম্পিউটার স্লো হয়ে যায়।

কেন কম্পিউটার হ্যাং করে ?

কয়েকটি কারণে সাধারণত কম্পিউটার হ্যাং করে থাকে । তার মধ্যে অন্যতম বা প্রধান কারন হলো কম র‍্যাম ব্যবহার করে ভারি সফটওয়্যার ওপেন করা। বিষয়টি ক্লিয়ার করে দিচ্ছি, ধরেন আপনি আপনার কম্পিউটারে ২ জিবি র‍্যাম লাগায় রাখছেন্, কিন্তু আপনি ব্যবহার করতে গেছেন এডোবি ফটোসোফট এর আপডেট ভার্সন বা এডোবি প্রিমিয়ার প্রো । তাহলে আপনার কম্পিউটার হ্যাং করবে।

আবার যদি আপনি আপনার কম্পিউটারে ২ জিবি বা ৪ জিবি র‍্যাম লাগায় এক সাথে অনেক সফটওয়্যার চালাচ্ছেন তাহলেও আপনার কম্পিউটারটি হ্যাং করবে।

আপনি ক্রাক ফাইল বা প্রোগ্রাম ব্যবহার করলে আপনার শখের কম্পিউটারটি হ্যাং করতে পারে। এমনকি কম্পিউটার হার্ডওয়্যারে  ধূলাবালি জমা হলে কম্পিউটারটি স্বাভাবিক ভাবে হ্যাং করতেই পারে।

এছাড়া কম্পিউটারে ভাইরাস বা বিভিন্ন ম্যালওয়্যার থাকলে কম্পিউটার হ্যাং মারতে পারে।

কম্পিউটার হ্যাং করলে করনীয় বা হ্যাং হলে কী করবেন ?

হঠাৎ করে আপনার কম্পিউটারটি হ্যাং করলে আপনি হয়তো কম্পিউটার বা ল্যাপটপের পাওয়ার সুইচ কয়েক সেকেন্ড চেপে রেখে অফ করে ফেলবেন । অথবা আপনার কম্পিউটারের পাওয়ার লাইন খুলে দিয়ে কম্পিউটারটি অফ করে ফেলবেন। তারপর আবার নতুন করে চালু করে কম্পিউটারটি ব্যবহার করা শুরু করবেন। যদি এই কাজটি করে থাকেন তাহলে অনেক বড় ভূল করবেন। কেননা এইভাবে পিসি অফ করলে কম্পিউটার হার্ডওয়্যারের উপর অনেক চাপ পরে ফলে পিসির অনেক বড় সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কি করতে হবে চলুন যেনে নেই-

  • আপনার কম্পিউটারের টাস্ক ম্যানেজার ওপেন করতে হবে।
  • টাস্ক ম্যানেজার ওপেন করতে কীবোর্ড এর Ctrl+Shift+Esc বাটন গুলো একসাথে প্রেস করতে হবে। তাহলে নিচের ছবিটির মতো টাস্ক ম্যানেজার ওপেন হবে।
  • টাস্ক ম্যানেজার ওপেন হলে এখানে আপনি দেখতে পারবেন কোন সফটওয়্যার এর আপনার পিসি হ্যাং করছে।
  • যে সফটওয়্যারের জন্য পিসি হ্যাং করছে , সেই সফটওয়্যারের নামের পাশে দেখতে পারবেন ” not responding” ।
  • যেই সফটওয়্যারে not responding লেখা দেখতে পাবেন , আপনি সেই সফটওয়্যারের উপর কারসর নিয়ে মাউস এর লেফট বাটন ক্লিক করে সফটওয়্যারটিকে সিলেক্ট করবেন।
  • সফটওয়্যারটিকে সিলেক্ট করা হলে নিচের End Task  এ ক্লিক করবেন। ক্লিক করা হলে দেখবেন আপনার কম্পিউটারের হ্যাং ছেড়ে দিয়েছে।

কী করলে আপনার কম্পিউটার নতুনের  মতো ফার্স্ট থাকবে এবং স্পিড পাবেন নতুনের মতো ?

আমরা যখন কোনো কম্পিউটার কিনে নেই। তখন কম্পিউটারটি খুব ভালোই চলে । কিন্তু চলাতে চালতে এক সময় কম্পিউটারটি স্লো হতে থাকে । স্লো হতে হতে এক সময় এতোটাই স্লো হয় যে সেটা চালানোর অবস্থায় থাকে না। সাধারণত কয়েকটি কারণে আমাদের পিসি স্লো হয়ে যায়। সেই কারণ গুলো আমি ইতোমধ্যেই আলোচনা করেছি। তাই আর নতুন করে এই বিষয়ে কিছু বলবো না এখন। তবে এখন আমি আপনাদের বলবো কি কি কাজ করলে আপনার স্লো হওয়া কম্পিউটারটি আবার আগের মতো ফার্স্ট হবে এবং ঠিক আগের মতো স্পিডে চলবে ইনশাআল্লাহ। আমি আপনাদেরকে আজকে যে ট্রিকগুলো শেখাবো , এই ট্রিক গুলো আপনারা প্রতি মাসে কমপক্ষে  এক থেকে দুই বার এপ্লাই করবেন। আশা করি আপনাদের আর পিসি স্লো হবে না।

তো চলুন ট্রিক গুলো যেনে নেই-

  • আপনার কম্পিউটারের একদম নিচে বাম দিকে স্টার্ট মেনুর পর যে সার্চ বক্স আছে সেখানে গিয়ে  run টাইপ করে Enter প্রেস করতে হবে। Enter প্রেস করলে নিচের ছবির মতো একটা ডায়ালগ বক্স ওপেন হবে।
  • এখন এই ডায়ালগ বক্সে লেখার জন্য যে জায়গাটা আছে সেখানে  %temp%  লিখে Enter প্রেস করলে , আপনাকে অনেক গুলা ফাইল দেখাবে। যদি কোনো পারমিশন চায় তো দিয়ে দেবেন। তারপর আপনি Ctrl+A একসাথে প্রেস করে সবগুলা সিলেক্ট করবেন। তারপর একসাথে সবগুলা ফাইল ডিলিট করে দেবেন। এমন হতে পারে যে কিছু ফাইল ডিলিট হচ্ছে না। যদি ডিলিট না হয় তো স্কিপ করে যাবেন। আসলে এই কাজ গুলো করার সময় আপনার পিসিতে যে সফটওয়্যার গুলো ওপেন করা থাকবে ,তার ফাইল গুলো ডিলিট হবে না। এজন্য আপনি একটা কাজ করতে পারেন। যখন এই কাজ করবেন, তখন সব সফটওয়্যার অফ করে রাখবেন। আর ভয় পাওয়ার কিছুই নেই এই ফাইলগুলো ডিলিট করলে আপনার কম্পিউটারের কোনো ফাইল হারাবে না। এগুলো মূলত টেমপোরারি ফাইল। এই অদরকারি ফাইল গুলোর জন্যই মূলত পিসি স্লো হয়।
  • এবার আবার স্টার্ট মেনুর পাশে  যে সার্চ বক্স আছে, ওই খ্যানে যাবেন। তার পর আবার run টাইপ করে Enter প্রেস করতে হবে। আবার আগে মতো ডায়ালগ বক্স ওপেন হবে। বক্সে দেখবেন %temp% লেখা আছে। আপনি %temp% কেটে দিয়ে লিখবেন prefetch লিখে Enter প্রেস করবেন। কোনো পারমিশন চাইলে দিয়ে দিবেন। এবার আবার আগের মতো সব ফাইল সিলেক্ট করে ডিলিট করে দেবেন।
  • আগের মতো আবার run ক্লিক করে এবার শুধু temp লিখে Enter ক্লিক করবেন। তাহলে আগের মতো অনেক ফাইল দেখতে পারবেন। সব গুলো ফাইল ডিলিট করে দেবেন।
  • এতোক্ষণ আপনি যে ফাইল গুলো ডিলিট করছেন। সেগুলো সব রিসাইকেল বিনে জমা হইছে। তাই এখন আপনাকে রিসাইকেল বিন থেকে সব ডিলিট করে দিতে হবে।
  • উপরের কাজ গুলোর পাশাপাশি আরো কিছু কাজ করতে হবে, যেমন আপনার কম্পিউটারের র‍্যাম গুলে খুলে পরিষ্কার করতে হবে।
  • সি ড্রাইভে পর্যাপ্ত পরিমান জায়গা ফাকা রাখতে হবে। মিনিমাম ২৫ থেকে ৩০ জিবি। যদি এর থেকে বেশি ফাকা রাখতে পারেন তো অবশ্যই ভালো হবে।
  • আর যদি সম্ভব হয় তো পিসিতে র‍্যাম মিনিমাম ৮ জিবি লাগানোর চেষ্টা করবেন।
  • ক্রাক সফটওয়্যারের ব্যবহার এড়িয়ে চলবেন। যদি চালাতেই হয় তো বিশ্বস্ত কোনো সাইট থেকে নিয়ে চালাবেন।
  • আপনার কম্পিউটারের এন্টি-ভাইরাস নিয়মিতো আপডেট করবেন।
  • পিসিতে পর্যাপ্ত পরিমান বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখবেন। এতে করে পিসি কম গরম হবে।ফলে স্পিড কমবে না।

উপরের নিয়ম গুলো যদি ঠিক ভাবে কাজ করেন । তো আপনার কম্পিউটারের স্পিড কমবে না ইনশাআল্লাহ। অনেক ভালো চলবে আপনার কম্পিউটার।

কেউ যদি কাজ গুলো করতে না পারেন তো তাদের জন্য ভিডিও দিয়ে দিচ্ছি ভিডিওটি দেখে দেখে করে নিবেন।

আশা করি আজকে এই পোস্টটি আপানাদের জন্য অনেক উপকারি হয়েছে। আপনাদের যদি আরো অন্য কোনো বিষয়ে পোস্ট দরকার হয় তো আমাকে কমেন্টে জানাতে পারেন। আমি যত তারাতারি সম্ভব দিয়ে দিব। সেই পর্যন্ত ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। ট্রিকবাংলাদেশ ডটকম এর সাথেই থাকবেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *