স্বপ্নপুরী পিকনিক স্পট স্বপ্ন নয়, অথচ স্বপ্নের মতো নির্মল নিরিবিলি এক মায়াবী স্বপ্নময় ভুবন স্বপ্নপুরী যা ইংরেজিতে Shopnopuri Artificial Amusement Park নামে পরিচিত। দিনাজপুর (Dinajpur) জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জের খালিশপুর মৌজায় প্রায় ৪০০ একর জমির ওপর বিস্তৃত এই দৃষ্টিনন্দন পিকনিক বা বিনোদন স্পট স্বপ্নপুরী (Shopnopuri Picnic Spot)।
স্বপ্নপুরীর পিকনিক স্পট এর অবস্থানঃ
স্বপ্নপুরীর অবস্থান দিনাজপুর জেলা শহর থেকে সড়ক পথে ৩৩ মাইল বা ৫২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার খালিশপুর মৌজায়। ফুলবাড়ি উপজেলা শহর থেকে স্বপ্নপুরী এর দূরত্ব ১২ কিলোমিটার। দিনাজপুর থেকে ফুলবাড়ি আফতাবগঞ্জ হাট হয়ে সম্পূর্ণ পাকা রাস্তা দিয়ে এখানে পৌঁছনো যায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য দর্শনার্থী চিত্তবিনোদন বা পিকনিক করার জন্য এখানে ছুটে আসেন।
কখন স্বপ্নপুরী পিকনিক স্পটে আসবেন?
বিশেষ করে শীত মৌসুমে জনসমাগম ঘটে বেশি। বর্তমানে চলচ্চিত্র স্পট হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছে। ইতোমধ্যে এখানে কয়েকটি চলচিত্র চিত্রায়িত হয়েছে। নয়ন জুড়ানো নিরিবিলি এ স্বপ্নপুরীতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পর্যটকরা এখানে আসতে শুরু করেছে। স্বপ্নপুরীতে এসে পৌঁছলে স্বাগত জানাবে স্বপ্নপুরীর গেটে দন্ডায়মান দুটি বিশাল আকৃতির পরীর প্রতিকৃতি। এ দুটি পরী তাদের দু’ডানা প্রসারিত করে ও একহাত উঁচু করে গেটের দু’পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
স্বপ্নপুরী পিকনিক স্পটে দেখার মতো দৃশ্যঃ
গেট পেরিয়ে পথের দু’ধারে বিভিন্ন গাছের সমারোহ। তারপর চোখে পড়বে পথের দু’ধারে সারি সারি দেবদারু গাছ। দেবদারু গাছের দু’পাশে নারিকেল গাছের সারি। এখানে রয়েছে কৃত্রিম হ্রদ, পাহাড়, লেক, উদ্যান, বৈচিত্র্যপূর্ণ গাছগাছালি ও ফুলের সমারোহ, শিশুপার্ক, চিড়িয়াখানা, কৃত্রিম পশুপাখি, ফুলবাগিচা, ইটখোলা, কৃত্রিম ঝর্ণা, ঘোড়ার রথ, হংসরাজ সাম্পান, শালবাগান, খেলামঞ্চ, নামাজঘর। কুঞ্জ, ভাস্কর্য, ডাকবাংলো, মাটির কুটির, বাজার প্রকৃতিতে বাংলাদেশের মানচিত্র।
যেন এক মোহন-মায়াবী স্বপ্নিল ভুবন। কয়েক ভাগে বিভক্ত করা এই স্বপ্নময় জগতের পথ চলতে চলতে দেখা যায়, ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম কিংবা ঘাড়গুঁজো বসে থাকা অবসন্ন কৃষকের ভাস্কর্য। সেখানে সারিবদ্ধ চেয়ার, টুল বসানো আছে। হংসরাজ সাম্পানে চড়ে স্বচ্ছ নীল পানির লেকে হারিয়ে যাবেন কিছুণের জন্য স্বপ্নের জগতে। সাম্পানে যেতে যেতে দেখা যাবে কোথাও একাকী দাঁঁড়িয়ে আছে নারী, মাথা নিচু করে বসে আছে হতাশাগ্রস্ত যুবক অথবা ফুটে আছে বিশালকৃতি কচুপাতা।
এছাড়াও রয়েছে কৃত্রিম পশু দুনিয়া। প্রবেশ পথে দুটি ড্রাগন সাদর সম্ভাষণ জানানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছে। দেয়ালে চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বিলুপ্তপ্রায় হিংস্র প্রাণীদের প্রতিকৃতি। এরপর দু’এক পা ফেলতেই চমকে উঠবেন; সামনেই পথ জুড়ে হাঁ করা এক নর-করোটি দেখে। আর পশু দুনিয়ায় পৌঁছতে হলে এই নর-করোটির মুখের ভেতর দিয়েই যেতে হবে।
এছাড়াও এখানে রয়েছে, কৃত্রিম পাহাড় ও ঝর্ণা। ঝর্ণার পানি গড়িয়ে একটি ছোট জলাশয়ে পড়ছে। লেকের পাশে রয়েছে ২৫০০ বর্গফুট বিস্তৃত বাংলাদেশের মানচিত্র, যা ইট-সিমেন্ট দিয়ে সুন্দরভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। এই স্বপ্নময় স্বপ্নপুরী এসে ইচ্ছা করলেই দু’একদিন থাকাও যাবে। এ জন্য রয়েছে নিশিপদ্ম, নীলপরী, সন্ধ্যাতারা, রজনীগন্ধা মেঠোঘর এবং ভিআইপি কুঞ্জ নামের পাঁচটি মনোমুগ্ধকর বাংলো।
অবসর যাপনের জন্য এসব বাংলোগুলো ভাড়া দেওয়া হয়। এখানে অল্প দামে খাবারের সুব্যবস্থা আছে। স্বপ্নপুরী – তে শিশুদের জন্য রয়েছে শিশুপার্ক, রয়েছে দোলনা ও চরকিতে ঘোরার ব্যবস্থা। রয়েছে ঘোড়ার ওপর চড়ে ঘোড়া চালনা, সুদৃশ্য ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে বেড়ানোর ব্যবস্থাও রয়েছে।
ঘোড়ার গাড়ির উপরে রয়েছে সুদৃশ্য রঙিন ছাতা, যা চলার সঙ্গে সঙ্গে ঘুরছে। এছাড়াও রয়েছে অফিস চত্বরে কেনাকাটার জন্য বাজার, রেস্টুরেন্ট । রয়েছে রান্নার সহায়তার জন্য বিভিন্ন ধরনের ভাড়া চুলা। চেয়ার, টেবিল, হাঁড়ি-পাতিলসহ ডেকোরেশনের সব জিনিস ভাড়া পাওয়া যায় এখানে।স্বপ্নপুরী পিকনিক স্পটে রয়েছে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
নতুন নতুন তথ্য পেতে ট্রিকবাংলাদেশ ডটকম এর সাথে থাকুন।
আমাদের ফেইজবুক পেজে লাইক এবং আমাদের ফেইজবুক গ্রুপে জয়েন হতে পারেন। আর মন চাইলে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবসক্রাইব করে রাখতে পারেন। ধন্যবাদ